Banner

আইসিটি ও জীবন দক্ষতা ই ম্যাগাজিন ২০২৩

গ্রাফিক্সঃ তায়েবা তাবাসসুম লাবিবা

১। ল্যাব নিয়ে মজার অভিজ্ঞতাঃ এসিডের প্রতি ভালবাসা- সুমাইয়া ইসলাম মিম

২। জীবের প্রতি রোবটের সহানুভূতি- মিতুল হোসেন আদর

৩। তুমিই আমার চাঁদ – শাহরিয়ার আবির

৪। দা গেইট – তাহমিদ হাসনাইন আদিব

৫। অরোরা – রাফি আল নুর

৬। সোশ্যাল মিডিয়ার কাছে হারিয়ে গেছে “বন্ধুত্ব” – তানভীর হোসেন

৭। পূর্ণিমা- শাহরিয়ার আবির (দ্বাদশ শ্রেণী)

৮। বিজ্ঞান বিষয়ক ভ্রমন অভিজ্ঞতাঃ জাতীয় বিজ্ঞান জাদুঘর, ঢাকামোঃ রাহাত চৌধুরী পুলক

৯। প্যারাডক্স – তানভীর হোসেন

১০। এরিয়া ২০৬৫৭১ – উমায়ের তানভীর প্রান্ত

১১। Human vs Artificial Intelligence – সাজিদ হোসেন সিক্ত

১২। মহাকর্ষ আসলেই কি কোন বল নয়? – মোঃ নাফিস ফুয়াদ

১৩। ইন্দ্রজাল – মো: নাফিউল হক

১৪। আমরা কেন আলোর চেয়ে বেশি বেগ অর্জন করতে পারব না? – মোঃ নাফিস ফুয়াদ

১5। গ্রাফিক্স যাত্রা – তায়েবা তাবাসসুম লাবিবা

ল্যাব নিয়ে মজার অভিজ্ঞতাঃ এসিডের প্রতি ভালবাসা

আমরা কয়েকজন বন্ধুরা মিলে নোট করছিলাম। খাতায় সালফেট এর সংকেত লিখার পর হটাৎ কিছু মনে পড়ায় হো-হো করে হাসতে শুরু করলাম। সবাই তো অবাক। আরও অবাক করে দিয়ে বললাম আমার আপুর করা কান্ডকারখানার কথা মনে পরেছে। ওদেরকে পরে বলতে লাগলাম,তখন আমার আপু ক্লাস নাইনে পড়ত। একবার আপু প্রথমবারের মতো কেমিস্ট্রি ল্যাবে যায়। ল্যাবের বিভিন্ন ধরনের এসিড, কেমিক্যাল দেখেতো আপু খুশিতে আটখানা। খুশির ঠেলা সামলাতে না পেরে সে এসিড চুরি করে। একটি এসিডের কালার নাকি ভীষণ পছন্দ হয়েছে। তাই সেই রঙের সাথে ম্যাচ করে জামা,জুতা কিনার জন্য এসিড চুরি করেছে। কী পর্যায়ের চিন্তা ভাবনা! ভাবা যায়? যেই ভাবা সেই কাজ। সুযোগ বুঝে আসার সময় এসিড চুরি করে টেস্টটিউব থেকে বোতলে ঢেলে ব্যাগে করে বাসার পথে রওনা হয়েছে।কিছুদুর পথ যাওয়ার আপুর মনে হলো ব্যাগটা হালকা লাগছে। আরও কিছুক্ষণ পর মনে হলো জুতাও হালকা লাগছে। পায়ের দিকে তাকানোর পর আপু তো অবাক, হতবাক,হতভম্বেরও চরম পর্যায়ে। জুতা ছিড়ে গেছে,ব্যাগের তলাও ছিড়ে গেছে। বইখাতা কিছুদূর পিছনে রাস্তায় গড়াগড়ি খাচ্ছে। এতসবকিছু দেখে আপু আহাম্মকের মতো চোখের পলক ফেলতেও যেনো ভুলে গেছিলো। অতঃপর আপু আবিষ্কার করলো সবকিছু এই এসিড বাবাজির কারবার। বোতলের এসিড গলে ব্যাগে পড়ে ব্যাগের তলা ছিদ্র করে জুতায় পরে জুতাও ছিড়ে গেছে। আধ-ভিখারি অবস্থায় আপু বাসায় যায়। আম্মু তো সব শুনে রেগেমেগে দু-চারটি থাপ্পড় লাগিয়ে দিয়েছে। সাথে ঝাড়ুর বারিও ফ্রি। ঝাড়ু হাতে আপুর পিছনে পিছনে ছোটা আম্মু আর আপু ব্যস্ত নিজেকে আড়াল করতে। এ ঘর থেকে ও ঘরে আপুর দৌড়াদৌড়ি আর আমাদের দম ফাটানো হাসি। এতটুকু বলে থামলাম। তারপর বিজ্ঞর মতো তাকিয়ে বন্ধুদের বললাম তো কি বুঝলে বাচ্চারা? সবাই সমস্বরে বললো, চুরির ফল । হো-হো।

সুমাইয়া ইসলাম মিম (দ্বাদশ শ্রেণি; বিভাগ: ব্যবসায় শিক্ষা; রোল-৩২০০২)  

 

জীবের প্রতি রোবটের সহানুভূতি

প্রাচীনকাল থেকেই মানবজাতি প্রাণীর প্রতি অমানবিক নিষ্ঠুরতা দেখিয়েছেন। যা দিন দিন বিরামহীন পথের মতো থামার কোনো অবকাশ নেই। মানুষের হৃদয় সময়ের সাথে সাথে রোবটের মতো হৃদয়হীন হৃদয়ে পরিবর্তন হচ্ছে। কেমন হয়, যদি হৃদয়হীন রোবটকেই একজন সহানুভূতিশীল সৎ মানুষের হৃদয় দিয়ে বিবেচনা করি? মানুষের কল্পনার চেয়ে সুন্দর আর কিছু হতে পারে না, আমিও নিজের কল্পনায় একটি রোবটকে আবিষ্কার করলাম। যে তার সাথে অল্প সংখ্যক  প্রাণীদেরকে নিয়ে খুব দূরে যেখানে  মানবজাতির কোনো চিহ্ন নেই, এমন একটি জায়গায় তাদের সাথে খুনসুটিতে দিন কাটাচ্ছে। প্রাণীগুলোও যেনো এখন ভয়হীন ভাবে বেঁচে থাকতে পেরে ভীষণ খুশি। আর নিজের কল্পনাকে সবার মাঝে তুলে ধরতে তথ্য প্রযুক্তির সাহায্য নিয়ে আর্ট এর মাধ্যমে নিজের কল্পনাকে এক নতুন রুপে তুলে ধরেছি।

যেখানে আমি বুঝাতে চেয়েছি প্রাণী থেকে শুরু করে  সব কিছুর প্রতি আমাদের সকলের একটু ভালোবাসা এবং স্নেহ থাকলে পৃথিবী এবং পৃথিবীর পরিবেশ আরো অধিক সুন্দর হতে পারতো।

মিতুল হোসেন আদর (রোল: ৩১০২৪; শ্রেনী: একাদশ)

তুমিই আমার চাঁদ

 

আচ্ছা বলুন তো, মঙ্গল গ্রহের মত পৃথিবীর ও যদি দুইটা উপগ্রহ থাকতো, তাহলে কেমন হতো ব্যাপার টা? উপগ্রহ দুইটার কি ধরনের নাম দিতাম আমরা? ডিমোস আর ফোবোস এর মতো? কিছু কবি থাকতো যাদের ভালোবাসা শুধু ডিমোস কে নিয়েই, তাদের নাম হতো ডিমোস কবি আর বাকি যারা ফোবোস নিয়ে কবিতা লিখতেন তাদের নাম হতো ফোবোস সাহিত্যিক। এখনকার চন্দ্রগ্রহণ পাল্টে যেতো ডিমোস গ্রহণে। ডিমোস এর অমাবস্যার সময় আকাশে ঝুলে থাকতো ফোবোস। তখন হয়তো নতুন একটা ব্যাপার আসতো, সুপার ফুল মুন, যেখানে দুই চাঁদের একসাথে পূর্ণিমা হতো। আচ্ছা, দুইটা চাঁদ নিয়ে যে এতো বাড়াবাড়ি করছি, তখন দুইটা চাঁদ থাকায় যদি চাঁদের প্রতি মানুষরে obsession ই মরে যায়? তখন অবশ্য প্রেমিক তাদের প্রেমিকাকে বলতে পারতো না “তুমিই আমার চাঁদ”, তাহলে তো আবার বিপদ আছে..

শাহরিয়ার আবির (দ্বাদশ শ্রেণী)

দ্যা গেইট

৫ আগস্ট, ২০২৫, নাসার সদর দপ্তরে নাসা স্পেসএক্স, ইউএসও সহ বিশ্বের প্রধান মহাকাশ সংস্থার গোপন বৈঠক চলছে ৷ এমিনিস নাসার প্রধান ) বলে উঠল ‘আপনারা নিশ্চয়ই বুঝতে  পারছেন , আপনাদের এখানে ডেকেছি মানে বিষয়টা গুরুতর ৷ গত পরশুদিন (551 SST ) গ্রহে থাকা  আমাদের মহাকাশ স্টেশনের কিছু মহাকাশচারী একটি ক্ষতিগ্রস্ত স্পেসশিপ খুজে পায়। তারা তার ভিতর থেকে তিনটি জীবকে আহত অবস্থার খুজে পায়। তারা দেখতে পায় তারা আসলে মানুষের মতো কিন্তু তাদের কোনো ভ্রু , লোম কিংবা চুল নেই। পরে তাদেরকে রিমান্ডে নেওয়া হয়। তখন কিছু ভয়ঙ্কর তথ্য বেরিয়ে আসে ৷ যেই রিপোর্টটি আমাদের টিম আমাদের কাছে পাঠায় সেটা আসলেই আমাদের জন্য দুশ্চিন্তার কারণ হয়ে দারিয়েছে ৷ ” ,এই বলে সে স্ক্রিনে ভিডিও অন করে দেয়। সেখানে তারা বলছে তারা হলো ফিদিগান | তারা রোসাদি স গ্যালাক্সি থেকে এসেছে ৷ তারা আসলে মানুষের থেকে অনেক উন্নত। তারা ইতিমধ্যে ৭টি তিন্ন গ্যালাক্সির ভিন্ন সাতটি গ্রহে ইতিমধ্যে বসবাস শুরু করেছে। তারা এক গ্যালাক্সি থেকে অন্য গ্যালাক্সিতে যাওয়ার সময় যে ট্রান্সপোর্টেশন গেইট ব্যবহার করত মহাজাগতিক বিষ্ফোরনে তা ধ্বংস হয়ে গেছে ৷ তাই তারা নতুন ট্রাসপোর্টেশন গেইট এর সন্ধানে বের হয় ৷ তাদের একটি দল নাকি সর্বপ্রথম মিল্কিওয়েতে একটি গেইটের সন্ধান পেয়ে তাদের গ্রহে সিগনাল পাঠায় ৷ তারপর তারা এখানে আসে ৷ এই পর্যন্ত দেখে সকলে খুশি হয়ে ওঠে ৷ তারা এই ভেবে খুশি হয়, যে তারা এইবার এলিয়েনদের  সাথে যোগাযোগ করতে পারবে। এর মধ্যে ভন (ইউএসও  প্রধান )বলে ওঠে, ” ভালোই তো হলো ৷ “

কিন্তু এরপর এমিনিস যে ভিডিওটি দেখায় সেটি দেখে সকাল স্তম্ভিত হয়ে গেল ৷ফিদিগানরা বলছে, ” আমাদের কে ছেড়ে দাও ৷ আমাদের বেধে রেখো লাভ নেই, তার পূর্বেও আমরা যে গ্যালাক্সিতে ছিলাম, নাভিনো 381,এর সকল জীব আমরা ধবংস করেছি ৷ তোমাদের ও একই পরিনাম হবে। এই কথা  শুনে সকলে দুশ্চিন্তায়  পড়ে গেল |সকলে এসি রুমেও যেন ঘামছিল ৷ তাদের বুঝতে দেরি নেই। যে ফিদিগানরা  প্রযুক্তিগতভাবে কতটা উন্নত ৷ যেখানে মানুষ একটি গ্যালাক্সিতে সীমাবদ্ব সেখানে তারা অন্য গ্যালাক্সিতে অনায়াসে যাতাযাত করে। প্রথমে খুশি হলেও এখন তারা বুঝতে পারছে ফিদিগান রা একবার মিল্কিওয়েতে প্রবেশ করলে মানুষ হুমকির মুখে পড়বে ৷ তারপর এই বিষয় নিয়ে র্দীঘ সময মিটিং করে তারা সিদ্ধান্তে পৌছাল ৷ তারা সেই ট্রাসপোর্টেশন গেইট ধ্বংস করবে। যাতে তারা  আমাদের গ্যালাক্সিতে আসতে না পারে। রিমান্ডের মাধ্যমে তারা সেই গেইটের অবস্থান বের করে ৷ তারপর রাশিয়া থেকে ক্রিপ্টোনয়েট এনে সেই গেইটটি ধ্বংস করলো ৷ এভাবে পৃথিবীবাসী বড় বিপদ থেকে রক্ষা পায়।

গল্পটি পড়ে জিদান তার বন্ধু আরাহামকে বললো, ” ভালোই লিখেছ ,তবে একটি প্রশ্ন রয়েই যায় ৷ ফিদিগানদের আসা প্রথম দলটির সাথে কী ঘটল ?” আব্রাহাম কিছুটা হোস বলল , ” থাক না , কিছু বিষয় অমিমাংসিত ” ৷

তার কিছুদিন পর সানশাইন ম্যাগাজিন থেকে মেইল আসে  ,তার এই গল্পটি ২০২৫ এর সেরা বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনি নির্বাচিত হয়েছে ৷ তাদের বার্ষিক সংখ্যায় এটি প্রকাশিত হবে। এটি শুনে সে অনেক খুশি হয়। পুরো বিশ্ব এখন তাকে চিনব।

তার কিছুদিন পর জানা যায় অনিবার্য কারনে সানশাইন এর বার্ষিক সংখ্যাটি এবার আর প্রকাশিত হবে না ৷ সেই রাতেই তার কলিং বেল বেজে ওঠে ৷ সে দরজা খুলেই দেখে মানুষের মতো প্রাণী যাদের  ভ্রু, লোম, চুল কিছুই নেই ৷ সে চিন্তা করছে এটা কীভাবে সম্ভব৷ তাদের মধ্যে একজন বলে উঠল , ” তোমাকে আমাদের সাথে যেতে হবে ৷ “

তাহমিদ হাসনাইন আদিব (বিজ্ঞান বিভাগ; রোলঃ ১১১১৯)

অরোরা বা মেরুজ্যোতি

পৃথিবীর এক বিষ্ময়কর প্রাকৃতিক আচরণ হল অরোরা। মেরু অঞ্চলে রাতের আকাশে একধরনের আলোর প্রদর্শনী দেখা যায়, এটিই হল অরোরা। বাংলায় একে বলা হয় মেরুজ্যোতি। পৃথিবীর দুই চম্বুকীয় মেরুতে এই আলোর নাচন দেখা যায়। উত্তর গেলার্ধে সৃষ্ট অরোরা কে বলা হয় “অরোরা বোরিয়ালিস” এবং দক্ষিণ গোলার্ধে সৃষ্ট অরোরা কে বলা হয় “অরোরা অস্টালিস” । যা এক অন্যন্য সুন্দর প্রাকৃতিক বিস্ময়। এটি মূলত রাত ও ভোরের সময় আকাশে নানা রঙের আলোর খেলা, যা পৃথিবীর উত্তর ও দক্ষিণ প্রান্ত থেকে দেখা যায়। ১৬২৩ সালে বিখ্যাত জ্যোর্তিবিদ গ্যালিলিও এর নামকরন করেন ভোরের দেবী অরোরা এবং ভোরের বাতাসের প্রতিশব্দ বোরিয়াস মিলিয়ে। 

নর্দার্ন লাইট বা উত্তরীয় আলো প্রাথমিকভাবে আর্কটিকের কাছাকাছি উচ্চ-অক্ষাংশ অঞ্চলে পরিলক্ষিত হয় । যেমন আলাস্কা, কানাডা, গ্রিনল্যান্ড, আইসল্যান্ড, নরওয়ে এবং সুইডেন।

আমাদের পৃথিবীর চারিদিক ঘিরে রয়েছে অদৃশ্য চৌম্বকীয় ক্ষেত্র । এই চৌম্বক ক্ষেত্র সৌরজগতের বিভিন্ন ক্ষতিকর তেজস্ক্রিয়তা থেকে পৃথিবীরে রক্ষা করে । সূর্য থেকে আসা বিভিন্ন সক্রিয় কণা বা পরমাণু প্রতিনিয়ত আামাদের পৃথিবীকে অতিক্রম করছে । একে সৌর বায়ু বলে । এই সৌর বায়ু যখন আমাদের পৃথিবীর কাছাকাছি আসে তখন পৃথিবীর দুই মেরু কর্তৃক চৌম্বকীয় বলের দ্বারা আকর্ষিত হয় এবং বায়ুমন্ডলে প্রবেশ করে । বায়ুমন্ডলে প্রবেশ করার পর বায়ুমন্ডলের গ্যাসীয় অণু ও পরমাণুর সাথে বিক্রিয়া করে । এবং অরোরা’র সৃষ্টি করে । অরোরা মূলত নাইট্রোজেন ও অক্সিজেন গ্যাসের বিক্রিয়ার ফলে সৃষ্টি হয় । নাইট্রোজেন পরমাণুর সাথে সৌর বায়ুর কণার বিক্রিয়ায় নীল ও নাইট্রোজেন অণুর সাথে সৌর বায়ুর কণার বিক্রিয়ায় বেগুনী রঙ সৃষ্টি হয় । অপরদিকে ভূ-পৃষ্ঠ থেকে ১০০ কি.মি. ও ২৪০ কি.মি. উচ্চতায় অক্সিজেন পরমাণু যথাক্রমে  সবুজ ও লালচে রঙ তৈরি কর ।  বিভিন্ন রঙ মিশ্রিত হয়ে কিংবা একক রঙ আকাশে অরোরা তৈরি করে থাকে । এভাবে অরোরা তৈরি হয়ে থাকে।

অরোরা’র সাক্ষী হওয়ার সর্বোত্তম সময় হল শীতের মাসগুলি যখন  অন্ধকার, পরিষ্কার রাতে আকাশ আলোক দূষণ থেকে মুক্ত থাকে। অনেক লোক এই অবিশ্বাস্য ঘটনাটি সরাসরি দেখার জন্য বিশেষভাবে মেরু অঞ্চলে ভ্রমণ করে। এটি একটি বিস্ময়কর অভিজ্ঞতা যা বিশ্বের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য এবং মহিমা প্রদর্শন করে।

Rafi Al Noor (Class:12; Section: C; Roll : 1202122011008)

সোশ্যাল মিডিয়ার কাছে হারিয়ে গেছে “বন্ধুত্ব”

 ‘বন্ধুত্ব’– শব্দটা কেমন যেন অন্যরকম। বলতেই যেন খুশি খুশি লাগে। শব্দটার ব্যাখ্যা যতটা না গভীর তার থেকেও বেশি গভীর শব্দটার সাথে জরিয়ে থাকা অনুভূতিগুলো। আর এই বন্ধুত্ব নামক সম্পর্কটার শুরুটা হয় সেই ছোট্টবেলা থেকে। তারপর ধীরে ধীরে আমরা যত বড় হই তত বড় হয় আমাদের বন্ধুর সংখ্যা। নতুন করে অনেকেই আমাদের বন্ধু হয়। আবার অনেক বন্ধু-ই আমাদের জীবন থেকে চলে যায়। আর এই যাওয়া-আসার মাঝে যারা শেষপর্যন্ত আমাদের পাশে থাকে তারাই হয়ে ওঠে আমাদের প্রকৃত বন্ধু বা বেস্ট ফ্রেন্ড। স্কুল, কলেজ, ভার্সিটি কিংবা চাকরি জীবন, সবক্ষেত্রেই আমাদের পাশে বন্ধু নামক কিছু মানুষ থাকেই। যাদের সাথে জরিয়ে থাকে অনেক স্মৃতি-বিস্মৃতির গল্প। থাকে অনেক দুষ্টুমি, খুনসুটি কিংবা হাসি-ঠাট্টায় পূর্ণ সময়। মনে পড়ে ছোটোবেলায় যখন প্রথম প্রথম স্কুলে যেতাম, তখন বন্ধুত্বের শুরুটা হতো ‘মিল’ দিয়ে। আর ঝগড়া হলে হতো ‘আড়ি’। তারমাঝে আবার ছিল হাজার বছরের আড়ি, হাজার বছরের মিল। ছোটোবেলার সেই দিনগুলোর কথা মনে পড়লে নিজের অজান্তেই এখন হেসে ফেলি। কত মজারই না ছিল দিনগুলো! কিন্তু বর্তমান এই সময়ে বন্ধুত্বের সম্পর্কগুলো কেমন যেন ফিকে হয়ে গিয়েছে।

বন্দি হয়ে গিয়েছে মোবাইল বা ল্যাপটপ নামক যন্ত্রগুলোর মধ্যে। ইন্টারনেট জগতের হাজারো নতুন বন্ধুদের ভিড়ে কোথায় যেন হারিয়ে গিয়েছে আমাদের শৈশব-কৈশোরের সেই বন্ধুগুলো। কিন্তু ভার্চুয়াল জগতের এই বন্ধুগুলোকে কি আদৌ বন্ধু বলা যায়! প্রকৃত বন্ধু তো তারাই যারা আমাদের ভালো সময়ের পাশাপাশি খারাপ সময়গুলোতেও আমাদের সঙ্গ দেয়। যাদের সাথে নিঃসংকোচে আমরা মনের কথাগুলো শেয়ার করতে পারি। যাদের সাথে মান-অভিমান হয় ঠিকই তবে তার সমাপ্তিটাও হয় সুন্দর। অপরদিকে এই ইন্টারনেট জগতের বন্ধু! তারা তো আজ আছে কাল নেই। এমনকি তাদের মাঝে এমনও অনেকে আছে যাদের সাথে আমাদের কখনো দেখাও পর্যন্ত হয়নি। অথচ এরকম অনেক মানুষের কারণেই আমাদের সেই ছোটোবেলার একসময়ের প্রিয়বন্ধুগুলোর সাথে কথা বলাটা আর ঠিক হয়ে ওঠে না। কী অদ্ভুত তাই না! একসময় গল্প করব বলে যেসব বন্ধুদের সাথে ক্লাসে বসার জন্য অন্যদের সাথে রীতিমতো যুদ্ধ ঘোষণা করতাম। যাদেরকে স্কুলে একদিন না দেখলো অস্থির হয়ে উঠতাম আজ শুধুমাত্র ফেসবুক কিংবা ইনস্টাগ্রাম মতো সোশ্যাল মিডিয়াগুলোর কারণে সেইসব প্রিয়বন্ধুগুলোর সাথে একটু সময় নিয়ে কথা বলাটাই আর হয়ে ওঠে না। অথচ দিনের অনেকটা সময়ই কিন্তু আমরা ব্যয় করছি এই সকল সোশ্যাল মিডিয়াগুলোর পেছনে। অনেক সময় ব্যয়ে এডিট করা ছবি আপলোড দেওয়া-ও হচ্ছে নিয়মিত। হচ্ছে না শুধু ক্লাসের ফাঁকের রোমাঞ্চকর গল্প। একসাথে গান গাওয়া, কিংবা টংয়ের দোকানে চায়ের সাথেকার আড্ডাগুলো। মাঝে মাঝে মনে হয়, আমরা সোশ্যাল মিডিয়াগুলোকে নয়, সোশ্যাল মিডিয়াগুলো আমাদের ব্যবহার করছে। ইন্টারনেটের কারণে আমরা যেন বাঁচতে ভুলে গিয়েছি, ভুলে গিয়েছি হাসতে! অনুভূতিগুলো যেন আটকা পড়ে গিয়েছে কি-বোর্ডে থাকা ইমোজিগুলোর মধ্যে। কিন্তু দিনশেষে কোন কিছুই আমাদের ততটা আনন্দ দিতে পারে না যতটা আনন্দ আমরা আমাদের প্রিয় বন্ধুদের সাথে সময় কাটানোর মাঝে পেয়ে থাকি। বন্ধুত্ব বলতে শুধু একটি সম্পর্কের নাম নয়, অনেক ধরনের অনুভূতিকেও বোঝায়। আর যত যাই হোক ইন্টারনেট জগতে এই অনুভূতিগুলোর খোঁজ পাওয়া সম্ভব নয়। তাই আমাদের উচিত ছবিগুলোকে নয়, সম্পর্কগুলোকে এডিট করা। সম্পর্কগুলোতে জং ধরেছে যে!

তানভীর হোসেন (শ্রেনিঃ একাদশ; শাখাঃ মানবিক; রোলঃ ২১০১৬)

পূর্ণিমা

আমাদের পরিবেশের বিভিন্নমৌলের পরমাণুগুলো যখন সমযোজী বন্ধনে আবদ্ধ থাকে তখন তারা নিজেদের মধ্যে একটা সুক্ষ্ম দূরত্ব বজায় রেখে আবর্তন করে। এই সূক্ষ্ম দূরত্ব টাকে বলা হয় নিষিদ্ধ এলাকা। এই দূরত্বটা অতিক্রম হয়ে গেলেই পরমাণুগুলো মিলে যে অনু টা তৈরি হয় সেটার structure fall করবে। আসলে আমাদের জীবনরে প্রতিটি ক্ষেত্রেই ব্যাপারটা একই। নির্দিষ্ট দূরত্বের মাঝে কাউকে আসতে দেয়া যাবেনা। দিলেই বিপদ! তখন সবচেয়ে ভালো মানুষ টাকেও অসহ্য লাগতে থাকে। চাঁদে বসে কখনোই পূর্ণিমা দেখা সম্ভব না। পূর্ণিমা দেখতে হয় দুর থেকে। প্রায় তিন লক্ষ চুরাশি হাজার কিলোমিটার দূর থেকে।

শাহরিয়ার আবির (দ্বাদশ শ্রেণী)

 

বিজ্ঞানবিষয়ক ভ্রমণ অভিজ্ঞতা: জাতীয় বিজ্ঞান জাদুঘর, ঢাকা


জাতীয় বিজ্ঞান জাদুঘর ঢাকার আগারগাঁও এর শেরে বাংলা নগরে অবস্থিত বাংলাদেশের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ভিত্তিক জাদুঘর। ২৬ এপ্রিল
, ১৯৬৫ সালে এর যাত্রা শুরু হয়। জাদুঘরে ঘুরাঘুরির আগ্রহ আমার ছোটবেলা থেকেই ছিল। অবসর পেলেই আমরা জাদুঘরে ঘুরতে যেতাম। বিজ্ঞান নিয়ে আগ্রহের কারণে আমার পরিবারের সাথে বিজ্ঞান জাদুঘরে ভ্রমণ করতে গিয়েছিলাম। আমার বাসা যাত্রাবাড়ী থেকে আগারগাঁও কিছুটা দূর, আর জ্যাম লাগলে তো কথাই নেই। তবুও অন্যান্য দিনের তুলনায় তাড়াতাড়ি ই পৌছে গেলাম। বিজ্ঞান জাদুঘরে ঢুকেই দেখলাম একটি ডাইনোসর এর অবয়ব। আশেপাশে ছোট-বড় গাছাপালা থাকায় জায়গাটা দারুণ লাগছিলো। জাদুঘরে প্রবেশের জন্য আমরা টিকেট সংগ্রহ করলাম। প্রতিটি টিকেট ২০/- টাকা করে। বিজ্ঞান জাদুঘরে ঢুকলেই প্রথমে আপনার নজরে পরবে সৌরজগতের একটি মডেল। একুরিয়ামে থাকা কিছু সুন্দর মাছ আমাদের নজর কেড়ে নিল। জাদুঘরটি মূলত কয়েকটি গ্যালারিতে বিভক্ত : মহাকাশ বিজ্ঞান গ্যালারি, শিশু গ্যালারি, জীববিজ্ঞান, পদার্থবিজ্ঞান, উদ্ভিদবিজ্ঞান। জাদুঘরটিতে নানান প্রাণীর অবয়ব তৈরি করা আছে যা খুবই নিখুঁত ভাবে তৈরি। মনুষ্য বাচ্চার জন্মের আগের অবয়ব থেকে শুরু করে পূর্ণবয়স্ক মানুষের কঙ্কাল, মানুষের পৌষ্টিকনালি সবকিছু জাদুঘরটিতে রয়েছে। আমরা ২ টা তিমির কঙ্কালও জাদুঘরে দেখতে পেলাম। নানান যন্ত্রপাতিও দেখেছিলা। জাদুঘরে মজার কিছু জিনিস আমরা উপভোগ করেছি যেমন 4D মুভি (টিকেট ৪০/-করে), রাতে টেলিস্কোপ দেখা ইত্যাদি।  টেলিস্কোপ টা জাদুঘরের ছাদে সেট করাগাছের সেলুলোজ ভেঙে কোন প্রক্রিয়ায় কাগজ তৈরি হয় তার একটি মডেল জাদুঘরে ছিল যেটা আমার কৌতুহল দূর করে। শিশু গ্যালারিতে বাতাসের মাধ্যমে বলের ভেসে থাকার একটি মজার খেলা আছে। এটা দেখে আমার ছোট ভাইবোনদের সে কি আনন্দ!  সর্বোপরি জাদুঘরে দিনটা আমাদের অসাধারণ কাটে। আপনারাও আপনাদের অবসরে জ্ঞানের পরিধি বাড়াতে চলে আসতে পারেন জাতীয় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি জাদুঘরে।

মোঃ রাহাত চৌধুরী পুলক (একাদশ শ্রেণী, মানবিক, রোল: ২১০৪৮)

প্যারাডক্স

প্যারাডক্স, সহজ কথা বিভ্রান্তি যার উৎপত্তি প্রাচীন গ্রিসে। প্যারাডক্স বা বিভ্রান্তি সৃষ্টি করা হয়েছিল ভ্রান্তি দূর করার জন্য। প্যারাডক্স মূলত একই বৃত্তে ঝরঝর আবর্তন করার মতোই ব্যাপার। যেমন ধরুন আমরা সক্রেটিস-এর গ্রেট প্যারাডক্স নিয়ে যদি ভাবি তাহলে দেখুন, সক্রেটিস বলেছেন – I know that, I don’t know anything.

এটার মানে হচ্ছে, আমি জানি যে আমি কিছুই জানি না। এবার এই কথাটা নিয়ে খানিকটা ভাবুন, উনি বলেছেন তিনি জানেন যে তিনি কিছুই জানেন না কিন্তু তিনি এই ব্যাপারটি জানেন যে তিনি কিছুই জানেন না সুতরাং তার কথাটি পুরোপুরি সত্যি নয় আবার আপনি মিথ্যাও বলতে পারেন না। এটাই প্যারাডক্সের একটি আদর্শ উদাহরণ। নিচে আরো কয়েকটি প্যারাডক্স দেওয়া হলো, প্যারাডক্সগুলো কমপক্ষে তিনবার করে পড়ুন। একবার পড়লে জট পাকিয়ে যাবেন।

১) হ্যাঁ-না প্যারাডক্স:  ধরুন আপনাকে একটি প্রশ্নের উত্তর দিতে হবে হ্যাঁ বা না দিয়ে। এবং প্রশ্নটি হলো- আপনি কি এই প্রশ্নের উত্তরটি না দিয়ে দিবেন? এখন আপনি যদি উত্তর দিতে চান হ্যাঁ তাহলে কি দাঁড়ালো…..! আপনার উত্তর দেওয়ার কথা ছিল না দিয়ে আপনি কিন্তু হ্যাঁ দিয়ে উত্তর দিয়েছেন। আবার আপনি যদি না দিয়ে উত্তর দিন, তো তখনও কিন্তু ঝামেলা হচ্ছে, কারণ আপনি বলতে চেয়েছেন যে আপনি না দিয়ে উত্তর দিবেন না। কিন্তু আসলেই আপনি না দিয়েই উত্তর দিয়েছেন। কি কনফিউজড? আচ্ছা পরেরটা দেখা যাক।

২) নগররক্ষী ও আগন্তুক প্যারাডক্স:  একটা শহরে এক অদ্ভূত আইন আছে!! সেখানে কেউ এলেই নগররক্ষী জানতে চায়, কেন সে শহরে এসেছে? জবাব ভুল হলে আর রেহাই নেই। সঙ্গে সঙ্গে ফাঁসি। একবার এক আগন্তক এলেন এই শহরে যথারীতি তার এখানে আসার কারণ জানতে চাইলেন নগররক্ষী। আগন্তক জবাব দিলেন তিনি ফাঁসিতে ঝুলতে এসেছেন। মহা সমস্যায় পড়ে গেলেন নগররক্ষী। যদি ফাঁসিতে ঝোলানো হয় তাহলে আগন্তকের কথাই সত্যি হয়ে গেলো। কিন্তু সত্যি কথা বললে কেউ ফাঁসিতে ঝুলতে পারে না। আবার যদি আগন্তককে ফাঁসিতে ঝোপানো না হয় তাহলে নগরের নিয়ম ভঙ্গ হয় আর লোকটার জবাবও মিথ্যা হয়ে যায়।

৩) সক্রেটিসের প্যারাডক্স:  সক্রেটিস বলেছিলেন, ‘আমি কিছু জানি না। এটাও একটা প্যারাডক্স। কেউ যদি কখনো বলে আমি কিছুই জানি না, সেটাও কিন্তু একটা প্যারাডক্স। কারণ সে যে কিছু জানে না সেটাও তো একটা জানা। প্যারাডক্স এটাই সবচেয়ে বড় ঊদাহরণ। প্যারাডক্স মানে পরস্পরবিরোধী বক্তব্য ।

৪) সত্যবাদী-মিথ্যাবাদী প্যারাডক্স:  কেউ যদি বলে, আমি আমার জীবনে কোনোদিন সত্যি কথা বলি নাই। এটাও প্যারাডক্স। কারণ, যদি সে সত্য না বলে তাহলে তার এ কথাটাও মিথ্যা। আবার এই কথাটা মিথ্যা হলে সে সত্যবাদী……… আবার মিথ্যাবাদী,…….সত্যবাদী…..মিথ্যাবাদী…….গোলমাল।

৫) নাপিতের প্যারাডক্স: এক গ্রামে একজন নাপিত ছিলো। সে ঐ গ্রামের মধ্যে যারা নিজেদের দাড়ি কাটতে পারত না, শুধু তাদের দাড়ি কাটত। কিন্তু তার নিজের দাড়িও সবসময় কামানো থাকত কিভাবে? এখানে সমস্যা হলো, নাপিত যদি নিজের দাড়ি নিজে কাটে তাহলে, এই প্রপোজিশন অনুযায়ী সে…… দাড়ি কাটতে পারে না। আবার সে যদি দাড়ি কাটতে না পারে তাহলেই কেবল নিজের দাড়ি কাটতে পারবে.. কনফিউজিং।

৬) সাপ ও লেজ প্যারাডক্স:  একটা সাপ যদি নিজেকে লেজের দিক থেকে যেতে শুরু করে তাহলে কী হবে? এটার ব্যাখ্যা পাঠকের উপর ছেড়ে দিলাম…….. কিছু করুন।

৭) সত্য-মিথ্যা প্যারাডক্স:  ধরুন একটি কার্ডের দুই দিকে নিচের বাক্য দুটি লেখা আছে; একদিকে : অপরদিকের বাক্যটি সত্য, অপরদিকে : অপরদিকের বাক্যটি মিথ্যা।

৮) কি ঘটবে যদি কোনো অপ্রতিরোধ্য বস্তু একটি অনত্ব বস্তুকে আঘাত করে? আরেকটু সরলভাবে যদি চিন্তা করি ‘The Avengers Film’ এর থর তার হাতুড়ি (প্রতিরোধ্য শক্তি) দিয়ে ক্যাপ্টেন আমেরিকার ঢালে (অনড় বস্তু) আঘাত করে তাহলে কি ঘটবে। যদি ঢাল অনড় হয় তবে থরের হাতুড়ি অপ্রতিরোধ্য হতে পারে না। আবার হাতুড়ি অপ্রতিরোধ্য হলে ঢাল অড় হতে পারে না।

৯) রেস্টুরেন্ট প্যারাডক্স:  কেউ যদি বলে, এই রেস্টুরেন্টে কেউ যায় না, কারণ ওটাতে সবসময় ভিড় থাকে। এটাও একটা প্যারাডক্স। কারণ কেউ না গেলে ভিড় হয় কিভাবে? আবর ভিড় না থাকলে সবাই সেখানে যাবে, সবাই গেলে ভিড় হবে, ভিড় হলে কেউ যাবে না……. যাবে না, আবার যাবে।

উপরের প্যারাডক্সগুলো বিভিন্ন উৎস থেকে সংগ্রহ করা যায় একটিকেও আপনি বিশ্লেষণ করতে পারবেন না। আর যদি সত্যি সত্যি আপনি কোনো প্যারাডক্স আপনি বিশ্লেষণ করে ফেলতে পারেন তবে নিঃসন্দেহে এটা প্যারাডক্স ছিলো না। প্যারাডক্স ব্যাপারটা যদি আরেকটু বুঝিয়ে বলি তাহলে ব্যাপারটা হবে এরকম,

ধরুন আপনাকে একটা বড়মাপের গোলাকার বস্তুর ভিতর ঢুকিয়ে দেওয়া হলো এখন আপনি যদি সেই গোলাকার বস্তুটির ভেতর অনবরত হাঁটতে থাকেন তাহলে বুঝতে পারবেন যে পথ কখনোই শেষ হবে না। কারণ আপনি ঘুরেফিরে এক জায়গায় বারবার আবর্তন করছেন। উপরের প্যারাডক্সগুলো খেয়াল করলেই বুঝতে পারবেন আপনি ঘুরে ফিরে একই জায়গায় ফিরে আসছেন।

সোজা কথায়, প্যারাডক্স ইনফিনিটি। কোথাও এক জায়গায় লেখা দেখেছিলাম। আমি মরে গিয়ে বেঁচে যেতে চাই। এটাও একটা প্যারাডক্স।

তানভীর হোসেন (শ্রেনিঃ একাদশ; শাখাঃ মানবিক; রোলঃ ২১০১৬)

এরিয়া ২০৬৫৭১

Chapter ১: নতুন বিশ্ব নতুন চোখের অভয় যখন ভয়

পিছনে ফিরে লুকা দেখলো রিডো পাগলের মত কন্টাক্ট করার চেষ্টা করে যাচ্ছে বাইরে গ্রাউন্ডে থাকা বিদ্রোহীদের সাথে। লুকা কয়েক মুহূর্ত চুপ করে কি যেন ভেবে নিলো। ভাবেনি সবশেষের জন্যে যে প্লান করে রেখেছিলো সেটাই এত দ্রুত কাজে লাগাতে হবে।

বড় মেশিনটার এগিয়ে আসার শব্দ কানে আসছে সাইন্টিস্ট লুকার কানে। কতখানি দূরে আছে আন্দাজ করতে পারছেনা কিন্তু সময় যে আর নেই সেটা পরিষ্কার বুঝতে পারছে সে। আজ সম্ভবত সব শেষ হয়ে যাবে সব কিছু। এতদিনের সব কষ্ট, পরিশ্রম, সংগ্রাম… স্বপ্ন। আর ভাবতে চাচ্ছেনা লুকা। চারপাশ থেকে মুহুর্মুহু ভয়াবহ বিস্ফোরণের শব্দ ভেসে আসছে। ‘এরিয়া ২০৬৫৭১’ এর হয়তো আজই শেষ দিন….

সাল ২৯৭১…। গোটা বিশ্ব এখন অত্যাআধুনিক প্রযুক্তি দিয়ে উন্নতির সর্বোচ্চ  সীমা ছোয়ার পথে এগুচ্ছে। পৃথিবীতে ৬ টি দেশ রয়েছে। এর ইস্ট প্লাগোপিয়ার এরিয়া ২০৬৫৭১ এ লুকা ও তার ছেলে রিডো থাকে। মানুষ যা সপ্নে ভাবতো এবং যা কখনোই সম্ভব হবে না এমন মনে করতো AI ও প্রযুক্তির কল্যাণে মানুষ তা সম্ভব করেছে। তৈরি হয়েছে অনেক আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্সি রোবট যারা নিজেরা বুদ্ধি খাটিয়ে মানুষের থেকেও সুন্দর ভাবে কাজ করতে পারে। মনে হচ্ছে মানুষ বিশ্বকে নতুন ভাবে দেখছে।কিন্তু নতুন বিশ্বের নতুন ক্ষমতা যে মানুষের কাল হয়ে দাড়াবে তা বুঝতে তারা অনেক দেরী করে ফেলেছিলো।।

Chapter : ভবিষ্যতবাণী যখন সত্য।

রিডো!

বাবার গলার আওয়াজে ফিরে তাকালো রিডো।’রিডো, এখান থেকে সরে যেতে হবে এখুনি। আপাতত এই পরিকল্পনা থেকে পিছিয়ে যাওয়া ছাড়া উপায় নেই।’ ব্যস্ত গলায় বলল লুকা। অবাক হলো রিডো।’কিন্তু বাবা, আমাদের কাছে এটাই ছিলো লাস্ট স্টেপ। এটা ছাড়া আমাদের আর কি করার আছে!”কখনোই কোন কিছুর লাস্ট ধাপ হয়না রিডো। একেকটা ধাপের শেষ হচ্ছে পরবর্তী ধাপের শুরু। এখন কথা বলে সময় নষ্ট করার আর মানে নেই, আমাদের আন্ডারগ্রাউন্ড ৯ নং ল্যাবে পৌঁছাতে হবে যেভাবেই হোক।’

রিডো কিছু বলতে যাচ্ছিলো, তখনই প্রচন্ড বিস্ফোরণে কেঁপে উঠলো ১৯০ তালা বিল্ডিংটা, যার ১৫০ তালায় রিডোরা এই মুহুর্তে অবস্থান করছে। কথা বাড়ালো না আর। রিডো সহ রুমে থাকা বাকি ১৯ জন লুকার পিছনে ছুটলো। গন্তব্য আন্ডার গ্রাউন্ডের ল্যাব ৯। লুকা ছুটছে সামনে। চোখের সামনে ভেসে উঠছে এ কয়দিনে ঘটে যাওয়া সব কিছু।পৃথিবী সভ্যতার উত্‍কর্ষে পৌঁছে গিয়ে এখন তার শেষের দিকে ছুটছে।একটার পর একটা এরিয়ায় ভাগ করা হয় পৃথিবীকে। সব এরিয়ার শাসন ক্ষমতা চলে যায় একনায়কতন্ত্রের দখলে। অবর্ননীয় অত্যাচার আর শোষণের যাঁতাকলে পড়ে যায় পুরো পৃথিবী।যেটা মানুষ ভাবেনা সবসময় সেটাই ঘটে।

ষষ্ঠ মাত্রার রোবটিক ব্রেইন উদ্ভাবন, যা নিয়ে বহুকাল আগেই বার বার সতর্কবাণী করা হয়েছে, দখল করে নেয় পৃথিবীর শাসনকাজ। অসংখ্য এরিয়ায় বিভক্ত মানুষগুলোকে কারাবন্দী করে ফেলা হয়। সবাইকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে একটা মাত্র মানবিক আবেগ ব্যবহার করা হয়… ভয়।

Chapter : শেষ রাস্তার সন্ধানে।

কিন্তুু এত সহজে হাল ছাড়েনি মানুষ।প্রতিটা এরিয়া বিদ্রোহ ঘোষণা করেছে। রক্তক্ষয়ী যুদ্ধে একটার পর একটা এরিয়ার পতন ঘটতে থাকে। আজ এরিয়া ২০৬৫৭১ এ যুদ্ধ চলছে। ভয়ংকর সব আগ্নেয়াস্ত্র আর সৈন্যদের বিরূদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছিলো অল্প কিছু বিদ্রোহী। যাদের নেতৃত্বে ছিলো সাইন্টিস্ট লুকা কিন্তু আর সম্ভব হবে না। পিছু হটতে বাধ্য হয়েছে ওরা। ল্যাব ৯ এর দরজার সামনে এসে থমকে দাঁড়ালো লুকা প্রচন্ড বিস্ফোরণের শব্দে কানে তালা লেগে গেছে যেন। পুরো বিল্ডিংটা ধ্বসে পড়বে যে কোন সময়। দ্রুত ল্যাবে ঢুকে যায় সবাই। ভেতরে অন্ধকার। ভয় কাজ করা শুরু করেছে সবার মাঝে। ­’এখানে কেন আমরা?’ গোলাগুলির শব্দ ছাপিয়ে চিত্‍কার করে উঠে রিডো। এক মুহুর্ত দম নেয় লুকা। তারপর বলে, ”রিডো… আমার কাছে আর কোন প্ল্যান নেই এ যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়ার। শেষ একটাই রাস্তা আমার জানা আছে, সেটা তোমার মা-কে দেয়া আমার শেষ প্রতিশ্রুতি। তোমাকে বাঁচিয়ে রাখা… তোমার জীবন যে কোন মুল্যেই হোক রক্ষা করা।”কিছু বুঝতে পারছেনা রিডো। বাবার মুখের দিকে তাকিয়ে আছে অবাক হয়ে। লুকা বলে চলে,”তুমি এখন যেখানে দাঁড়িয়ে আছো সেটা একটা টাইম পোর্টাল, টাইম মেশিনও বলতে পারো। পৃথিবীতে এই মুহূর্তে এই একটির অস্তিত্বই আছে। তুমি জানো টাইম ট্রাভেল সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ গত তিন শতক ধরে। আমি প্রচন্ড গোপনীয়তার সাথে এটাকে এই অবস্থায় রেখেছি। হয়তো এই সময়টার জন্যেই।”

”কিন্তু বাবা! তোমাদের ছেড়ে আমি একা একা স্বার্থপরের মত আরেক সময়ে থাকতে পারবোনা! আর এটা যদি সত্যি টাইমলাইন অল্টার করতে পারে তাহলে… আমরা এই যুদ্ধ থামাতে পারি!””সম্ভব না রিডো!” মাথা নাড়ালো লুকা। “এটা শুধুমাত্র একজনকে একবারই টেলিপোর্ট করতে পারবে আরেক টাইমলাইনে, ঠিক এই জায়গাতেই ফিরে যাবে কোন এক অতীতে। আমি নিজেও জানিনা ২য় বার ফিরে আসা সম্ভব কি না। আর কোন কথা না রিডো। আমি এটা চালু করছি, সময় নেই আর। লুকা দ্রুত কিছু বাটন টিপে দিলো। রিডো কিছু বুঝে উঠার আগেই নিজেকে আবিষ্কার করলো একটা কাঁচের গোল দেয়ালের ভেতর। কাঁচের স্ক্রীনে কিছু লেখা ফুটে উঠছে। কানে এলো লুকার কথা,”আমি জানিনা অতীতে তুমি কেমন থাকবে রিডো। কিন্তু আমি বিশ্বাস করি এই সময় এই ভয় থেকে অনেক দূরে অনেক ভালো থাকবে…! কথা শেষ হওয়ার আগেই ল্যাবের দরজা উড়ে গেলো যেন। মুহূর্তেই ভেতরে ঢুকে পড়লো অসংখ্য সৈন্য। ঘিরে ধরল লুকা সহ বাকিদের। রিডোর চিত্‍কার ওদের কাছে পৌঁছানোর আগেই বনবন করে ঘুরতে লাগলো তার চারপাশের কাঁচের দেয়াল। প্রচন্ড বিদ্যুত চমকের সাথে সাথেই জ্ঞান হারালো রিডো।

Chapter : পুরনোকে নতুন ভাবে জানা

চোখ খুলতেই প্রচন্ড সূর্যের আলোয় যেন দু’চোখ ঝলসে যাচ্ছিলো রিডোর। এত উজ্জ্বল সূর্যের আলো সে কখনো দেখেনি। আস্তে আস্তে কিছুক্ষণ চেষ্টা করার পর দু’চোখ খুলতে পারলো পুরোপুরি। উঠে বসতেই চারপাশের কাঁচের দেয়ালটা নেমে গেলো। কোথায় আছে ও? ভাবনাটা মাথায় আসতেই মনে পড়ে গেলো সব। এরিয়া ২০৬৫৭১ থেকে পালিয়ে আসতে হয়েছে ওকে। বেঁচে থাকার জন্যে… ভয়ে! এখন কোথায়?

মনে পড়লো বাবার কথা, ‘একই জায়গায় অন্য কোন সময়ে’। তার মানে এখন রিডো এরিয়া ২০৬৫৭১ এই আছে, অতীতের কোন এক সময়ে। কিন্তু কত সালে? মেশিনটার নিচে একটা ছোট কন্ট্রোল প্যানেল আছে। কিছু বাটন আর একটা স্ক্রীন। ওখানে লেখা সালটা পড়া শেষ হতেই হঠাত্‍ একটা শব্দ শুনে চমকে উঠলো রিডো। এতক্ষণ বাইরে খেয়াল দেয়াই হয়নি! চারপাশ এত সবুজ! এত এত সবুজ আগে কখনো দেখেনি রিডো!উপরে বিস্তৃত নীল আকাশ, সাদা সাদা মেঘ ওগুলো? এই আকাশ তো কখনো দেখেনি রিডো। দেখেছে কালচে ধূসর ধোঁয়ায় ঢেকে থাকা এক আকাশ। পায়ের নিচে মাটি, ঘাস এসব কিচ্ছুর অস্তিত্ব নেই ২৯৭১ এর ওই পৃথিবীতে।

­চারপাশে সবুজ গাছ, শস্যক্ষেত, জলাভূমি, খোলা আকাশ আর বুক ভরা খোলা বাতাস… পাগলের মত লাগছে রিডোর। অনেক কিছুই চিনতে পারছে না ও। কানে লাগানো অটো ট্রান্সলেটরটা সব কিছুর নাম বলে দিচ্ছে ওকে। অনেকটা হেঁটে এসে একটা উচুঁ জায়গায় দাঁড়ালো। ওর বিশ্বাস করতে ইচ্ছে করছে না এই এত শান্ত সবুজ স্বর্গের মত জায়গাটিই ২৯৭১ এ পরিণত হবে লোহালক্কড়ের ধ্বংসস্তুপে, অভিশপ্ত কোন এরিয়াতে! কেন? উত্তর খুঁজে পাচ্ছে না রিডো।

Chapter : গোলকধাঁধায় অন্য ভয়?

হঠাত্‍ দুজন মানুষকে এগিয়ে আসতে দেখলো রিডো দূরের রাস্তা দিয়ে। একজন পুরুষ আর একজন নারী। ওদের পরনের পোশাক অদ্ভুত! কানে ট্রান্সলেটর থেকে জেনে নিলো পোশাক সম্পর্কে। দুজনকেই কেমন ভীত শংকিত লাগছে। রিডো বুঝতে পারলো না এত সুন্দর শান্ত সময়েও কেন ওরা এমন ভয়ে ভয়ে দ্রুত পা চালাচ্ছে। ওদের সাথে কথা বলতে এগিয়ে গেলো রিডো। ওদের ভাষা দূর থেকেই বুঝে নিয়ে ট্রান্সলেট করে নিয়েছে। ওরা দুজন রিডোকে সামনে দেখে থমকে দাঁড়ালো। হয়তো রিডোর পোষাক ওদের কাছে উদ্ভট লাগছে। কিংবা রিডোকে ওরা অন্য কেউ ভেবেছে যাকে ওরা ভয় পায়। রিডো মুখে একটা অভয় দেয়ার হাসি টেনে ওদের ভাষায় প্রশ্ন করলো, “কেমন আছেন? ওর মুখে ওদের নিজস্ব ভাষা শুনে কিছুটা স্বস্তি পেলো মনে হলো রিডোর। “ভালো! শহর থেকে আসছ?” প্রশ্ন করলো লোকটা। শহর? হ্যাঁ, ও তো শহর থেকেই এসেছে। মাথা নেড়ে সায় দিলো। “আপনার পরিবার পরিজন কেউ নাই সাথে? ”মাথা নাড়লো রিডো। বুঝিয়ে দিলো ও একাই। “আহা! কাউরে ছাড়েনি?” লোকটার গলায় কেমন একটা কষ্ট ফুটে উঠলো। প্রশ্নটা যেন একদম অনেক আবেগ নিয়ে করা। রিডো কি উত্তর দেবে বুঝতে পারছেনা। কাউকে ছাড়েনি মানে? কিসের কথা বলছে এই লোক? ওর পরিবার সম্পর্কে এ কেন জানতে চায়? প্রায় হাজার বছর আগের এরা কি জানে ওর সম্পর্কে! “আপনি আমাদের সাথে আসেন! জানিনা কয়দিন থাকতে পারবেন কিংবা আমরা নিজেরাও আর কয়দিন পারবো! ওরা এসে পরবে… যে কোন দিন! উপরওয়ালাই জানেন কপালে কি আছে!” লোকটা রিডোর একটা হাত ধরে ওদের সাথে যেতে ইশারা করলো। কারা এসে পড়তে পারে? রিডোর কাছে সব গোলকধাঁধার মত লাগছে। ওদের কন্ঠের আন্তরিকতা আর কষ্টগুলো ওকে ছুঁয়ে যাচ্ছে কেন জানি। রিডো ওদের সাথে হেঁটে হেঁটে ওদের আবাসস্থলে পৌছালো। চারপাশ যেন ছবির মত সাজানো। ছোট ছোট ঘর। ছবির মত সুন্দর ওসব ঘরেই যেন স্বর্গের সব সুখ ধরা দিয়েছে। যত দেখছে তত মুগ্ধ হচ্ছে রিডো। লোকটার বাড়িতে মাটির দেয়ালের ছোট্ট দু’টা ঘর। ওদের দুই ছেলে আর একটা মেয়ে। ওদের কাছে রিডোকে পরিচয় করিয়ে দিলো কাকা হিসেবে। বেড়াতে এসেছে, কয়দিন থাকবে।

বাচ্চাগুলো রিডোর কাছাকাছি কিছুক্ষণ ঘুরাঘুরি করে অভয় পেয়ে একদম ওর কোলে এসে বসল। কেন জানেনা, রিডোর অন্যরকম একটা ভালো লাগা কাজ করছে ভেতরে। সব কিছু বড় আপন মনে হচ্ছে। এত কিছুর মাঝেও গ্রামের লোকেদের মাঝে একটা চাপা আতংক আর ভয় ঠিকই অনুভব করছে রিডো। এই অনুভুতি ওর খুব পরিচিত। কিন্তু কিসের ভয়? কিসের আতংক এই শ্যামল দেশের সুন্দর মানুষগুলোর?

Chapter : আপন সত্তাকে উপলব্ধি।

সেদিন রাতেই রিডোর সামনে পরিষ্কার হয়ে গেলো সব কিছু। প্রচন্ড গোলাগুলির শব্দে ঘুম থেকে লাফিয়ে উঠলো রিডো। প্রথমে মনে হলো স্বপ্ন দেখছে। এরিয়া ২০৬৫৭১ এর দুঃস্বপ্ন এখনো তাড়া করে বেড়াচ্ছে! কিন্তু না! মানুষের হইচই আর আহাজারীতে ঘর থেকে ছুটে বেরিয়ে এলো রিডো। নিজের চোখকে বিশ্বাস করতে পারছিলো না। চারপাশে আগুন আর আগুন। যে যেদিকে পারছে ছুটছে। আর প্রচন্ড গুলির আওয়াজ। কি হচ্ছে! বিষ্মিত দৃষ্টিতে চারপাশ দেখছে রিডো।“ওরা চলে আসছে! আমাদের গ্রামটাও শেষ করে দিয়ে যাবে! কিন্তু আমরাও জীবন দিবো, কিন্তু মাটি ছাড়বো না!’রিডো প্রশ্ন করতে গেলো ওরা কারা, কিন্তু তার আগেই দেখলো ওর আশ্রয়দাতা একটা লাঠি হাতে ছুটে গেলো সামনে। একটার পর একটা ভারি অস্ত্রে সজ্জিত সাঁজোয়া যান আসছে। রিডোর চোখের সামনে মেশিনগানের গুলিতে ঝাঁঝরা হয়ে গেলো তার সারা শরীর। প্রচন্ড এক বিস্ফোরণে রিডো ছিটকে গিয়ে পড়লো পাশের এক ডোবা জঙ্গলে। দম বন্ধ করে রাখলো রিডো। এখনো বিশ্বাস করতে পারছেনা সামান্য একটা লাঠি হাতে এতগুলো মেশিনগান হাতে আর্মির সামনে কি করে ছুটে যেতে পারে কেউ! যুদ্ধ! ভয়ংকর যুদ্ধ চলছে এখানেও। যে যুদ্ধ থেকে বাঁচাতে লুকা রিডোকে হাজার বছর অতীতে পাঠিয়েছে সেই যুদ্ধ এখানেও! কিন্তু ২৯৭১ এর ওই যুদ্ধের সাথে এই সময়ের এই নারকীয়তার কোন তুলনা করা সম্ভব? না! রিডো অসহায়ের মত দূর থেকে দেখছিলো একের পর এক ঘরবাড়ি জ্বালিয়ে দিচ্ছে ওই আর্মিরা! ওর চোখের সামনেই একের পর এক মেরে ফেলা হচ্ছে নিরীহ মানুষগুলোকে! চোখের পলক ফেলতে ভুলে গেছে রিডো। এমন জানোয়ারের মত পাশবিকতা সে কল্পনায়ও আনতে পারছেনা! সারা গায়ের রক্ত টগবগ করে ফুটছে তার। কিন্তু ও জানে এখান থেকে বের হওয়া মাত্র ওকে মেরে ফেলবে ওরা। এর থেকে তো এরিয়া ২০৬৫৭১ এ ওদের হাতে মারা যাওয়াও ভালো ছিলো! নিঃশ্বাস পর্যন্ত ফেলতে পারছেনা রিডো, আর তখনই ঘটলো রোমাঞ্চকর কিছু! হটাৎ  করেই ওই নিষ্ঠুর জানোয়ার সৈন্যদের উপর অতর্কিতে হামলা চালালো কিছু মানুষ। অবাক চোখে দেখলো রিডো… সাধারণ সব অস্ত্র হাতে একদল মানুষ কি প্রবল বিক্রমে কি অবলীলায় ওই জান্তব বাহিনীর প্রতিটা সেনাকে চারপাশ থেকে আক্রমণ করে যাচ্ছে। ভয়ে পিছিয়ে যেতেও পারছে না জানোয়ারগুলো। খালি গা আর লুঙ্গী পরা ওই যোদ্ধাগুলোর অসম্ভব সাহস আর দাঁতে দাঁত চেপে ধরা প্রতিজ্ঞার কাছে প্রচন্ড আধুনিক আর ভারি সব অস্ত্র নিয়েও কুলিয়ে উঠতে পারছেনা আর্মিগুলো। ওদের গুলিতে একের পর এক জন মাটিতে লুটিয়ে পড়লেও পিছু হটছে না তারা!

­একের পর এক বজ্রকন্ঠের হুংকারে যুদ্ধ করে যাচ্ছে! সাহস! কিসের এই সাহস! এদেশের মাটির জন্যে? কিসের এত ভালোবাসা যার জন্যে এরা খালি হাতে বুক পেতে দিচ্ছে ভারী মেশিনগানের সামনে! এই ইতিহাস? ২৯৭১ এ এই ইতিহাস কোথায়? এই মাটিতেই তো এরিয়া ২০৬৫৭১… এই বীরপুরুষদের রক্তে রাঙানো মাটিতে। উপরে উঠে আসে রিডো। ধ্বংসলীলার মাঝে দাড়িয়ে থাকে নিস্তব্ধ হয়ে! তারপর খুঁজে বের করে ওই যোদ্ধাদের। জেনে নেয় এই গৌরবান্বিত এই রক্তলাল যুদ্ধের ইতিহাস। সাড়ে ছয় মাস চলছে এ যুদ্ধের। একপ্রকার প্রায় খালি হাতেই যুদ্ধ করে প্রবল শক্তিশালী শত্রুকে পরাজিত করছে এখানকার মুক্তিপাগল মানুষেরা। লাখ লাখ প্রাণের বিনিময়েও ওরা এক চুল পরিমাণ জায়গা ছাড়েনি। অকল্পনীয় নির্যাতনেও এক পা পিছু হটেনি! আর রিডো? পালিয়ে এসেছে এই এদের উত্তরাধিকার হয়ে? অসম্ভব। এই গণজোয়ারের সাথে মিশে যায় রিডো। এর শেষ অব্দি তার দেখতেই হবে। আর তারপর…

­দুই মাস পরে-

­টাইম পোর্টালটার সামনে দাঁড়িয়ে আছে রিডো। এটা কেউ খুঁজে পায়নি এখন পর্যন্ত। আজ এখানে উত্‍সব। মুক্তির বিজয়োত্‍সব। রিডোও উত্‍সব করবে। আরেকটা কাজ বাকি। তারপরেই…!

Chapter : শেষ হাসি আমরাই হাসবো।

সাল ২৯০৭, সাইন্টিস্ট লুকা ও তার সহযোগীরা দু হাত উপরে তুলে দাঁড়িয়ে। সামনে প্রায় অর্ধশতাধিক রোবট সৈন্য। লুকার আর আক্ষেপ নেই। রিডো… তার একমাত্র সন্তানকে এই সময় থেকে অনেক অনেক দূরে পাঠিয়ে দিয়েছে। এখন মৃত্যুতেও তার আফসোস নেই।

ঠিক তখনই পুরো ল্যাবে প্রচন্ড রকম বিদ্যুত্‍ চমকে উঠলো আর টাইম মেশিনটা আগের জায়গায় ফিরে আসলো। লুকা বিস্ফোরিত চোখে দেখলো রিডো… চারপাশের গোলাগুলি বিস্ফোরণকে যেন অগ্রাহ্য করে ভিতর থেকে বেরিয়ে এলো দু হাতে থাকা দুটো মেশিনগান নিয়ে। অনবরত গুলি করতে করতে রোবটগুলোকে ল্যাব থেকে সরে যেতে বাধ্য করলো। লুকা সহ বাকিদেরকে নিয়ে অপর পাশের দরজা দিয়ে ছুটলো বাইরে। লুকা কিছু বুঝতে পারছে না। মাত্র দুই সেকেন্ড আগেই রিডো এখান থেকে গিয়েছে… কিন্তু ও ফিরে কেন এসেছে! “রিডো? তুমি আবার ফিরে এসেছো কেন?” প্রায় আর্তনাদ করে উঠলো লুকা। “অসমাপ্ত কাজটাকে শেষ করে যেতে বাবা। তোমাকে ধন্যবাদ, তুমি নিজেও জানোনা আমাকে তুমি কোথায় পাঠিয়েছিলে। আমরা কারা… আমাদের শিকড়কে জেনে এসেছি আমি। “দু সেকেন্ড রিডো! মাত্র দু সেকেন্ড ছিলে তুমি পোর্টালে!”

“তোমার টাইম ক্যালকুলেশানে গন্ডগোলটাই আমার জন্যে আশীর্বাদ। এখানকার এক সেকেন্ড পোর্টালে থাকা এক মাস। এই দু মাস আমার জীবনের শ্রেষ্ঠ দু’মাস বাবা। আসো আমার সাথে, অনেক কাজ বাকি।”লুকা বিশ্বাস করতে পারছেনা রিডো কিভাবে বাকি বিদ্রোহীদের উদ্বুদ্ধ করছে যুদ্ধে! রীতিমত খালি হাতে শুধুমাত্র সাহস আর বুদ্ধিতে একের পর এক যুদ্ধ জিতে নিচ্ছে এই কয়দিনে রিকি আর তার সঙ্গীরা।­ সেন্ট্রাল সিস্টেম থেকে স্বয়ং আলফা রিডোর সাথে সরাসরি কথা বলতে চেয়েছে।বিরাট এক হলোগ্রাম স্ক্রীনের সামনে দাঁড়িয়ে রিডো আর তার সহযোদ্ধারা। লুকা পেছনে। আলফা স্বয়ং রিডোকে তার বিদ্রোহী দল সহ সারেন্ডার করতে বলছে এবং রিডোকে তার সাথে কাজ করতে প্রস্তাব দিচ্ছে। স্বপ্নের মত লাগছে লুকার কাছে। আলফা স্বয়ং!

রিডো কিছুক্ষণ চুপ থেকে বললো-

“আপনি ভুল করছেন মহামান্য আলফা। আমার সাথের এরা বিদ্রোহী নয়। এদের সত্যিকারের নাম আপনার হয়তো জানা নেই, যে নামে আমরা আমাদের ডাকি।” “এবং সেই নাম?” “বিদ্রোহী নই, আমরা… মুক্তিযোদ্ধা।” “হা হা হা। মুক্তিযোদ্ধা? এবং তোমরা কি মুক্ত করতে চাও? যা অলরেডী মুক্ত এবং তোমরাই যারা এটাকে বিদ্রোহ করে দখল করতে চাও তারা মুক্তিযোদ্ধা?” “মহামান্য আলফা। আমার বাবা আমাকে এই যুদ্ধের হাত থেকে রক্ষা করতে হাজার বছর আগের এক টাইমলাইনে পাঠিয়েছিলেন যেটা এই এরিয়াতেই ছিলো। জানেন সেটা কত ছিলো? সেই টাইমলাইন ছিলো ”১৯৭১।” যেখান থেকে আমি জেনেছি যুদ্ধ জিততে গেলে মনে ভয় থাকা যাবেনা। নিজের জন্মভুমিকে নিজের জীবনের চেয়েও বেশি ভালোবাসতে হবে। তারাই ছিলেন আমাদের পূর্বপুরুষ যারা কোনদিন পরাধীনতার কাছে মাথা নিচু করেনি। আপনার আরো ভালো করে জেনে নেয়া উচিত্‍ ছিলো আমাদের ইতিহাস। ওদের বংশধর হয়ে আমরা কিভাবে হার মেনে নিবো আলফা?” একটা বিদ্রূপের হাসি হাসলো আলফা। “তোমাদের যুদ্ধ শেষে এসে দাঁড়িয়েছে রিডো। এরিয়া ২০৬৫৭১ এর সময় ফুরিয়ে এসেছে। তুমি এবং তোমাদের সাধের এরিয়ার আজকের মধ্যেই পতন ঘটবে।” হাতের রাইফেলটার নল হলোগ্রাম স্ক্রীনের দিকে তুলে একটা মুচকি হাসি দিলো রিডো। “আমি যেদিন অতীতের ওই টাইমলাইন ছেড়ে ফিরে আসি সেদিন তারিখ কত ছিলো জানেন? ১৬ ডিসেম্বর। ওদের, মানে আমাদের বিজয় দিবস। আজ এখানেও ১৬ ডিসেম্বর। এই সময় এই মুহুর্ত থেকে আমি আমাদের স্বাধীন হিসেবে ঘোষণা করলাম। আর হ্যাঁ, শেষ একটা কথা…­

আজ এই মুহুর্ত থেকে এরিয়া ২০৬৫৭১ বলে কোন কিছুর অস্তিত্ত্ব থাকবেনা। হাজার বছর আগে যে গৌরবময় নামের জন্যে আমাদের পূর্ব পুরুষ তাদের জীবন বাজী রেখেছেন আজ থেকে আমরাও সেই নাম নিয়েই যুদ্ধ করে যাবো আরো হাজার বছর, তবু মাথা নোয়াবো না! আর সেই  নাম…

 “বাংলাদেশ।”

উমায়ের তানভীর প্রান্ত; শ্রেণি : দ্বাদশ; বিভাগ : ব্যবসায় শিক্ষা

 

HUMAN VS ARTIFICIAL INTELLIGENCE 

Once upon a time human has dreamt of something that will work for them. Having this type of thoughts, they started to think about artificial intelligence. Artificial intelligence refers to the field of computer science and technology that introduces people to create new intelligent machines that can perform tasks that typically human intelligence. AI system is designed to learn from experience, make decisions and to solve complex problems. Ai has some more advantages like Automation and Efficiency, improve decision making, enhance customer experience, increase our accuracy & precision, advanced problem-solving capabilities, predicting analytics, innovation, research, exploration etc. those are the major factors where Ai can work for our betterment but the are also some minor tasks that AI can do. AI came to make our life easier than before but sometimes it will have a bad impact in the near future. The developers of Ai predict that if we don’t stop upgrading AI, within 5 or 10 years it will have a dangerous effect on human life. It can cause problems like job displacement, bias & discrimination, privacy & security risks, dependency on Ai, social isolation, algorithmic manipulation and fake information spreading, lack of human judgement and creativity. potential of autonomous weapons etc. Although artificial intelligence is the breakthrough invention of the century, the developers and the well-known Software engineers are very much concern about it’s future. They are giving precaution to the whole world about the future conflict about human vs AI. Ai is likely to rule the whole world within a few years if we don’t control the

evolution and development. Human will no longer be available to think out of artificial intelligence if it develops itself continuously. In conclusion AI is a transformative technology with immense importance. As we continue to advance AI it is crucial to strike a balance between harnessing its potential and addressing the ethical and societal implications to ensure a beneficial and responsible integration to our world.   

Sazid Hossain Sikto (HSC batch:2023 Section: D Roll: 1202223011114)

মহাকর্ষ কি আসলে কোনো বল নয়?

আলবার্ট আইনস্টাইনের  আপেক্ষিকতা তত্ত্ব বা The theory of relativity  অনুযায়ী মহাকর্ষ আসলে কোনো  বল নয় । বস্তুর ভরের কারণে space বেকে যায় এবং একটি বস্তু অন্য কোনো ভারী বস্তুর দিকে পতিত হয়। তবে  “মহাকর্ষ যে , কোনো  বল নয়” , উক্তিটি সম্পন্ন সত্য নয় ।

কোনো দুটি শিশু কোনো ভবনের উপরের তলায় এবং নিচের তলায় দুইটি ভিন্ন জায়গায় একই সময় জন্মগ্রহণ করলে ,২০ বছর পর তাদের বয়সের মধ্যে পার্থক্য থাকার কথা না।তবে The theory of relativity  অনুযায়ী time dilation এর কারণে একই সময়ে জন্মগ্রহণ করা দুটি শিশুর মধ্যে বয়সে পার্থক্য থাকবে , তবে তা খুবই সামান্য। Time dilation হয় কোনো স্থানের space  বেঁকে যাওয়ার কারণে এবং বস্তুর বেগের কারণে । কোনো বস্তুর ভরের কারণে বা উক্ত বস্তুর Gravitional Force এর কারণে বস্তুটির ভরকেন্দ্র বরাবর উক্ত স্থানের space বেঁকে যায়। কোন বস্তুর মহাকর্ষ বল যত বেশি হবে , উক্ত স্থানের স্পেস তত বেশি বেঁকে যাবে । অনেকটা এক টুকরা কাপড়ের চারমাথা চারজনে টানটান করে ধরে রাখার পর একটি কাঠের বল রাখলে,  কাপড়টি যেমন নিচের দিকে বেঁকে যায়,  তেমনি Space বেঁকে যায় । Space যেহেতু বেঁকে যায়, তার জন্য সময়ও slow হয়ে যাবে। আলো তার ধ্রুব বেগ বজায় রাখার জন্য সময় slow হয়ে যায়। আবার কোনো বস্তুর বেগ অনেক বৃদ্ধি পায়,  তখন উক্ত বস্তুর relativistic mass বা আপেক্ষিক ভর বৃদ্ধি পায় এবং আশেপাশের space বস্তুর ভরকেন্দ্র বরাবর বেঁকে যায়। আর space বেঁকে যাওয়া মানেই time dilation হওয়া। এ জন্য একই সময় জন্মগ্রহণ করা দুইটি শিশুর মধ্যকার বয়সের পার্থক্য হবে। ভবনের নিচ তলায় শিশুর  gravitional force বেশি এবং উপরের তলায় শিশুর gravitional force কম হবে। নিচের তলার শিশুর জন্য সময় কিছুটা ধীরগতিতে এবং উপরে তোলা শিশুর জন্য সময় কিছুটা দ্রুত চলবে, তবে তা খুবই সামান্য । Gravitational Force এর জন্য যে time dilation হয়, তা নির্ণয় করা হয় নিম্ন সূত্র দিয়ে

Δt’ = Δt /√(1-(2gr/c^2))

এবং বেগের জন্য যে time dilation হয় তা নির্ণয় করা হয়,

                                                           Δt’ = Δt √(1 – (v^2/c^2))

Δt= কোন দর্শকের সাপেক্ষে সময়ের পরিমাণ

Δt= ঘটনাটি যার সাথে ঘটছে তার সাপেক্ষে সময়

 মোঃ নাফিস ফুয়াদ (শ্রেনিঃ একাদশ; রোলঃ ১২০২২২৩০১১১১০)

ইন্দ্রজাল

শোনা গেল লাশকাটা ঘরে

নিয়ে গেছে তারে;

কাল রাতে ফাল্গুনের রাতের আধারে

যখন গিয়েছে ডুবে পঞ্চমীর চাঁদ

মরিবার হল তার সাধ।

~ জীবনানন্দ দাশ

সাইকোলজিস্ট জিব্রানের সামনে বসে আছে চিন্ময়। কিছু নিয়ে চিন্তিত সে৷ অনুমতি দেয়ায় বলতে শুরু করে চিন্ময়,” আমি অদ্ভুৎ কিছু ঘটনার মুখোমুখি হচ্ছি প্রতিনিয়ত আবার উদ্ভট এক স্বপ্ন প্রায়ই আমাকে তাড়া করে বেড়ায়। স্বপ্নের কথা যদি বলি সেখানে আমি দেখি যে লাল লাইটের আলোয়ে পূর্ণ একটি স্পেসশীপের ভিতরে ভেসে রয়েছি আমি। সাথে সাইরেন বেজেই চলেছে এবং কিছুদূর এগিয়ে গিয়ে দেখি একটি রোবট কিছু মেরামত করছে এবং আমাকে দেখেই রেগে ক্ষিপ্র গতিতে আমার দিকে এগিয়ে আসে এবং অদ্ভুৎ কিছু কোড বলে

“78 111 116 101 100 ” 

“78 111 116 101 100 “

এবং তার পরপরই তীব্র আলো এসে সব ঢেকে যায় এবং আমি ঘুম থেকে জেগে উঠি৷ কোড কনভার্ট করে একটি পাঁচ অক্ষরের শব্দ পাই কিন্তু তা দিয়ে কী বোঝানো হচ্ছে আমার জানা নেই। তবে মূল সমস্যা হলো অন্য ঘটনায় যেই ঘটনা আমাকে বাস্তব,অবাস্তবের এক মায়াজালে আটকে রেখেছে। আমি বুঝে উঠতে পারছি না আমার বাস্তবতা কোনটা। আমি প্রতিদিন জেগে উঠে আমার কাজে যাই কিন্তু অনেকদিন ধরে অদ্ভুৎ সব কাণ্ড ঘটছে। আমি সকালে যেখানে কাজে যাই সেই জায়গা পরিবর্তন হচ্ছে৷ আমার পরিবারের মানুষজন,পরিবেশ এমনকি পুরো পৃথিবীই যেনো পরিবর্তিত হয়ে যায় প্রতিদিন। একদিন সকালে উঠে দেখি আমি গুলশানের আলিসান বাসায় আছি তো আরেকদিন দেখছি চট্টগ্রামের পার্বত্য অঞ্চলের পাহাড়ে আছি। আরেকদিন স্বাভাবিক নিজের বাসা ধানমন্ডিতেই আছি কিন্তু আমার হাতে আইফোন ব্র‍্যান্ডের খাওয়া আপেলের লগো চেঞ্জ হয়ে পূর্ণ আপেল হয়ে গেছে। কখনো আমি নিজেই পরিবর্তিত হয়ে মুভি স্টার,লেখক বা অন্য কেউ হয়ে যাচ্ছি। কী সব যে হচ্ছিলো বলে বোঝানো সম্ভব নয়। তারপর হঠাৎ একদিন সেই স্বপ্ন আসা শুরু হলো। এরপর থেকে আমার স্বাভাবিক জীবনই চলছে কিন্তু প্রতিনিয়ত সেই স্বপ্ন দেখেই চলেছি। তাই শেষমেশ আপনার কাছে আসলাম, আমি কি পাগল হয়ে যাচ্ছি? নাকি আদৌ এর কোনো ব্যাখ্যা রয়েছে? ” একটানে বলে থামলো চিন্ময়

 

এক হাত গালে এবং মুখ কিছুটা বিকৃত করে খবরের কাগজের দিকে তাকিয়ে ছিলেন জিব্রান। চিন্ময়ের কথা শেষ হলে তিনি দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে চিন্ময়ের দিকে দৃষ্টি নিবদ্ধ করে বলতে লাগলেন,দেখেন একজন সাইকোলজিস্ট হিসেবে আমার যা বলা দরকার, যা কিছু ব্যাখ্যা দেয়ার কথা তা আপনার কথা শোনার সময়ই আমার মাথায় চলছিলো কিন্তু আপনার কথার শেষ পর্যায়ে আমি খবরের কাগজ হাতে নিয়ে মনে হয় ভুল করে ফেললাম। তা কেনো সেই কথা বলার আগে আপনার ঘটনাগুলোর ব্যাখ্যাটা দেয়া জরুরি। একজন মনোবিদ হিসেবে আমি এই তত্ত্ব কখনোই বলতাম না কিন্তু এখন না বলেও উপায় নেই। আপনার ঘটনার সোজাসাপটা ব্যাখা হচ্ছে সমান্তরাল মহাবিশ্বের ধারণা। যা এখনো বিজ্ঞান দ্বারা প্রমাণিত নয়। এটি একটি হাইপোথিসিস মাত্র কিন্তু ইন্টারনেট ঘুরলে এমন অনেক ঘটনা পাবেন যেখানে মানুষজন আপনার মতো ঘটনার সম্মুখীন হয়েছে তবে কথা হচ্ছে তাদের ঘটনার কোনো ভিত্তি নেই,সত্যতা নেই। এই সমান্তরাল মহাবিশ্ব ধারণার উপর এখন অনেক বই,সিনেমা ও সিরিজও হচ্ছে। এখন আপনার মতো স্বাভাবিক কেউ এসে আপনার ঘটনা বললে আমি তাকে সাইকোলজিক্যালি তার সমস্যাগুলো বলতাম কিন্তু আপনি যে এক্সেপশনাল! খবরের কাগজে চোখ দিতে গিয়ে আমার চোখ যেনো বেরিয়ে যায় এমন অবস্থা হয়েছিলো। আপনিই দেখেন কী লেখা কাগজে.. খবরের কাগজ দেখালে চিন্ময় দেখতে পায় সেখানে তার একটি ছবি দেয়া এবং লেখা,” গত এক সপ্তাহ আগে রাজধানীর ধানমন্ডি থেকে চিন্ময় মৃধার আত্মহনন কৃত লাশ উদ্ধার! মাথায় বাজ ভেঙ্গে পড়ে চিন্ময়ের। অন্যদিকে জিব্রান আবারো বলতে লাগলেন,” আমি এই খবরের শিরোনাম দেখে বুঝে উঠতে পারছিলাম না কিভাবে সম্ভব,তাইলে কি আমার সামনে ভূত বসে আছে নাকি? পরে আপনার কথা শেষে বুঝতে পেরেছি। যদি সেই সমান্তরাল বিশ্বের মাধ্যমেই ব্যাখ্যা দেই তাহলে বলতে হয়, আপনি এক সপ্তাহ আগ অবধি যেই যেই মহাবিশ্বে গিয়েছেন সেখানে আপনার অস্তিত্ব ছিলো কিন্তু শেষের এখানে আপনার অস্তিত্ব সেদিনই বিলীন হয়ে যায়। আর যার কারণেই আপনি স্বপ্ন দেখা শুরু করেন। পজিটিভলি দেখলে আপনার অন্য মহাবিশ্ব ভ্রমণের অদ্ভুৎ এক ক্ষমতা রয়েছে কিন্তু এখন এই জালে আটকা পড়েছেন। তাই স্বাভাবিক থেকেও প্রতিনিয়ত স্বপ্ন দেখে যাচ্ছেন। এখন কিভাবে এই জাল বা চক্র থেকে বের হবেন আমার জানা নেই…কথা শেষ হওয়া মাত্র তীব্র আলো এসে ঢেকে দেয় চারপাশ এবং সবকিছু অন্ধকার হয়ে যায়। এক শূন্যতার ইন্দ্রজালে আটকা পড়ে চিন্ময়।

মো: নাফিউল হক (প্রথম বর্ষ; বিজ্ঞান বিভাগ; রোল: ১১০২০)

আমরা কেন আলোর চেয়ে বেশি বেগ অর্জন করতে পারব না?

আমরা জানি, মহাবিশ্বের সবচেয়ে গতিশীল বস্তু হলো আলোর বেগ। আলোর বেগ হলো  299792458 ms-1    আইনস্টাইনের The Theory of Relativity -অনুযায়ী আলোর বেগ কোনো  পর্যবেক্ষকের সাপেক্ষে ধ্রুব, এবং আলোর বেগ মহাবিশ্বের সবচেয়ে দ্রুততম বেগ। ভর যুক্ত কোনো  বস্তুই কখনো আলোর থেকে বেশি বেগ অর্জন করতে পারবেনা । আলোর 99% বেগ অর্জনের সক্ষমতা লাভ করতে পারবে। একমাত্র ভারহীন কোন বস্তু আলোর বেগ অর্জন করতে পারবে যেমন:- Poton । কিন্তু কোনো  ভর যুক্ত বস্তু আলোর চেয়ে বেশি বেগ অর্জন করতে পারবে না? কারণ আলোর চেয়ে বেশি বেগ Causality Principle  কে লংঘন করে।Causality মানে হলো  Cause এবং Effect এর মধ্যবর্তী সম্পর্ক। Causality Principle  অনুযায়ী যেকোনো  Effect এর জন্য কোন cause বা কারণ থাকবে। যেমন:- আমরা যদি একটি ডিমকে মাটিতে ভাঙ্গা অবস্থায় দেখি, তাহলে আমরা বলতে পারবো  প্রথমে ডিমটি পড়েছে এবং পরে ভেঙেছে।  এখানে পড়ে যাওয়া হলো Cause এবং ভেঙে যাওয়া Effect। অর্থাৎ আগে Cause হয় তারপরে Effect দেখা যায় । যেহেতু আলোর মাধ্যমে আদান-প্রদান হয় এবং Information যদি আলোর চেয়ে বেশি বেগে চলে, তখন আমরা Effect আগে দেখবো তারপর Cause অর্থাৎ সময়কে আমরা Inverse আকারে দেখবো । এমনটি কেন ঘটবে তা একটি উদাহরণের মাধ্যমে বোঝাই, একজন একটি ডিম মাটিতে ফেলে দিয়েছে,  যার ফলে ডিমটি মাটিতে পড়ে ভেঙে যাবে । যদি ঘটনাটি আলোর চেয়ে বেশি বেগে ঘটতো,  তখন ডিম মাটিতে পড়তেছে , উক্ত তথ্য আলোর মাধ্যমে আমাদের চোখে আসার আগে ডিম ভেঙে গিয়েছে তার Information আমাদের চোখে এসে পৌঁছাতো। অর্থাৎ উক্ত লোক আগে Effect দেখত এবং পরে Cause।  সময় তখন বিপরীতমুখী চলতো যা Causality Principal কে লংঘন করে। কেউ আমাদের বন্দুক দিয়ে গুলি করছে, এটা বোঝার আগেই দেখতাম বন্দুকের গুলি আমাদের শরীরের ভিতরে চলে গেছে । এছাড়াও আমরা যদি নিউটনের দ্বিতীয় সূত্র দিয়ে বের করি,  কোন ভরের বস্তুকে আলোর বেগ অর্জন করাতে কি পরিমান বল প্রয়োগ করতে হবে , তাহলে বলের মান হবে অসীম, যা এই মহাবিশ্বে নেই। তাই ভর যুক্ত বস্তু আলোর চেয়ে বেশি বেগ অর্জন করতে পারবে না।

মোঃ নাফিস ফুয়াদ (শ্রেনিঃ একাদশ; রোলঃ ১২০২২২৩০১১১১০)

গ্রাফিক্স যাত্রা 

২০২০ সালে বাংলাদেশে করোনার প্রকোপ শুরু হলে লকডাউনের কারনে সম্পুর্নভাবে ঘরবন্দী হয়ে পরি।স্কুল কোচিং বন্ধ থাকায় প্রথম প্রথম বেশ মজা লাগলেও সেই মজা বেশিদিন থাকলো না। একা একা আর ভালো লাগছিলো না। পড়াশোনাতেও মন নেই। নাটক,সিনেমা,ওয়েব সিরিজ দেখতেও আর ভালো লাগছিলো না। একঘেয়ে জীবনের প্রতি যখন প্রচন্ড  বিরক্ত,কোনো কিছু করার নাই তখন হঠাৎ আমার এক বান্ধবীকে দেখলাম গ্রাফিক্স এর কাজ করতে।ওকে দেখে আমারো আগ্রহ হলো। নিজেও গ্রাফিক্স-এর কাজ শিখতে চাইলাম।কিন্তু সমস্যা হলো শিখবো কোথায়…! তখন আমাকে আমার সেই বান্ধবী সাহায্য করলো ।আমার সেই বান্ধবীর হাত ধরেই আস্তে আস্তে গ্রাফিক্স এর রঙিন দুনিয়ায় আমার বিচরণ শুরু হয়। ধীরে ধীরে দক্ষ হতে শুরু করলাম। এরপর ইউটিউবে ভিডিও দেখে আরো নতুন নতুন বিষয় শিখতে শুরু করলাম।আমার যাত্রা বাংলা টাইপোগ্রাফি দিয়ে শুরু হয়। ফেসবুকের বিভিন্ন টাইপোগ্রাফি গ্রুপে আমার করা বাংলা টাইপোগ্রাফি গুলো পোস্ট করা শুরু করি।এমন করে বেশ ভালোই আমার সময় যাচ্ছিলো।

হঠাৎ একদিন একজন আমাকে মেসেঞ্জারে মেসেজ দিয়ে বললেন যে আমার টাইপোগ্রাফি তার পছন্দ হয়েছে।তিনি আমাকে একটা ফ্রন্ট এর অক্ষর  ডিজাইন করে দিতে বলেন।আমিও রাজি হয়ে অক্ষর গুলো ডিজাইন করে দিই। সেই ছিলো আমার প্রথম কাজ যার মাধ্যমে আমি প্রথম টাকা উপার্জন করি।এর মাধ্যমে  আমার আত্নবিশ্বাস বাড়তে শুরু করে। পরবর্তীতে গ্রাফিক্স এক্সিকিউটিভ হিসেবে বিভিন্ন অর্গানাইজেশনের সাথে কাজ করার সুযোগ হয় যার মাধ্যমে নতুন নতুন অভিজ্ঞতা হতে থাকে।এভাবেই আমার করোনার ঘরবন্দী সময়  আনন্দময় হয়ে উঠলো। করোনার সময় আমার জীবন থেকে অনেক কিছু হারিয়ে গেলেও অনেক কিছু অর্জন করেছি। দিন শেষে বলতেই হয় ” জীবন সুন্দর।

তায়েবা তাবাসসুম লাবিবা (একাদশ; রোল: ১১)